বিভাগগুলি

তারার জন্ম মৃত্যু

By ESO/S. Steinhöfel  

ব্রেকথ্রু ডিজিটাল

আকাশের দিকে তাকান। তাকালেই দেখবেন সারা আকাশ জুড়ে তারা আর তারা। খালি চোখে দেখলে প্রায় ছয় হাজার তারা দেখা যেতে পারে। মন ভরে দেখুন, প্রাণ ভরিয়ে দেখান। এখন যদি একটা টেলিস্কোপ বা দূরবীন পাওয়া যায় ব্যাপারটা একেবারে অন্যরকম হতে পারে। যদি সাহায্য নেওয়া হয় দূরবীনের, সাথে সাথে সংখ্যাটা পৌঁছে যাবে 2 লক্ষ্য বা কখনো একেবারে 50 কোটি।

স্বাভাবিক ভাবেই অনুমেয় গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে সংখ্যাটা কয়েক লক্ষ কোটি বা তারও বেশি। বলা হয়, ' মহাবিশ্বে তারার সংখ্যা পৃথিবীর মোট বালুকনার থেকেও অনেক বেশি'। এদের মধ্যে অন্যতম সূর্য, প্রাণের অনুকূল বসুন্ধরা পৃথিবীর অস্তিত্ব যাকে ঘিরে বিদ্যমান। তারাগুলি হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দ্বারা নির্মিত বিশালকায় পিণ্ড যার অভ্যন্তরে সতত নিউক্লীয় বিভাজনের মাধ্যমে আলো এবং তাপ উৎপাদন করে। এই এক একটি তারা, আসলে এক একটি বিশালাকায় গ্যাসীয় পিণ্ড, যার প্রায় ৭৫ শতাংশ হাইড্রোজেন এবং ২৫ শতাংশ হিলিয়াম।# যেখানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলে নিউক্লীয় সংযোজন বা বিভাজনের মত তাপ সৃষ্টিকারী বিক্রিয়া। কিন্তু প্রশ্ন এসে যায়, নিউক্লীয় সংযোজন বা বিভাজন আসলে কি? কি করেই বা এই গ্যাসীয় পিণ্ড তৈরী হল অর্থাৎ তারার জন্ম হল কি করে? যে তারার কারণে, প্রাণের সৃষ্টি, সেই তারার কি মৃত্যুও হতে পারে? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তরে পৌঁছবার আগে প্রয়োজন বিজ্ঞানের কিছু সহজ পাঠের ।

সহজ পাঠের সেই ধারণা গুলো তারার জন্ম মৃত্যুর রহস্য আমাদের কাছে সহজ এবং বোধগম্য করে তোলে। একসময় বিজ্ঞানী টরিসেলি বলেছিলেন, "আমরা বাতাসের মহাসমুদ্রে ডুবে আছি।.... এই গভীর মহাসমুদ্রের একেবারে তলদেশে আছি আমরা।" বায়ুর ওজন আছে, এই ধারণা দিয়েছিলেন গ্যালিলিও, তাকে গুরু হিসেবে মেনে নেওয়া টরিসেলী আমাদের সামনে আনলেন বায়ুর চাপের ধারণা। আমরা জানতে পারলাম, 'বায়ুমণ্ডল তার ওজনের জন্য ভূপৃষ্ঠে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে লম্বভাবে যে পরিমান বল প্রয়োগ করে তাকে ঐ স্থানের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলে'। প্রথমেই একটি যেকোন আকৃতির বস্তু কল্পনা করি, সে যে স্থান ধারণ করে, তাকে আমরা আয়তন বলি, এবং তার মধ্যে যতটুকু পদার্থ থাকে, সেটা তার ভর। আবার একক আয়তনের কোন বস্তুর মধ্যে যতটুকু পদার্থ থাকে, সেটা সেই বস্তুর ঘনত্ব। যেকোন বস্তুর ঘনত্ব তার তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল; তবে গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্ব, চাপ #এবং তাপমাত্রা এই দুটোর উপর নির্ভর করে।#। আবার বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের E=mc^{2} এই বিখ্যাত সূত্রের মাধ্যমে দেখালেন শক্তি ও ভরেরও একটা পারস্পরিক সম্পর্ক আছে

ফলে বস্তু গতিশীল (গতিশক্তি হল শক্তির একটা রূপ) হলে, ভর কমে, গতি কমলে ভর বাড়ে#। তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেকোন গ্যাসীয় বস্তুর আয়তন বাড়তে থাকে, তার অনু পরমাণু গুলো ছুটে বেড়াতে থাকে, তাপ কমালে ঘটে ঠিক উল্টোটা।# বস্তুময় জগতের এই নিয়মগুলো আজ স্কুল পাঠ্য হলেও, একসময় এগুলোই ছিল সম্পূর্ণ অজানা। যদিও এই নিয়ম সর্বত্র একই ভাবে কাজ করে না। প্রকৃতির এই নিয়মগুলোর মৌলিক পরিবর্তন না হলেও, তার domain পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মের রূপটা পাল্টে যায়, পৃথিবীর সমতলে যে নিয়মের যে রূপ সত্য, পাহাড়ে তা নয়। অন্য কোন গ্রহ যেমন, বৃহস্পতির ক্ষেত্রে একই নিয়ম আরেক রূপে প্রতিভাত হয়, আবার মহাকাশে গেলে তা অকার্যকর হয়ে যায়, কার্যকর হয় একই নিয়মের অন্য রূপ। একসময় প্রকৃতির এই নিয়মকে জানার চেষ্টার মধ্যে দিয়ে, মানব মস্তিষ্কের বিশেষ গঠনের বিকাশলাভ, যা তাকে একদিকে বিশ্লেষণ করতে শিখিয়েছে, এবং সেই বিশ্লেষণী ক্ষমতা কে কাজে লাগিয়ে সে প্রকৃতির আরো নতুন নিয়মকে জানার চেষ্টা করেছে, জেনেছে; শুধু তাই নয়, সেই নিয়মকে মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে ব্যবহারও করেছে। এই প্রতিনিয়ত জানার প্রক্রিয়া একদিকে যেমন চলেছে, লক্ষ হাজার বছর ধরে, ঠিক তেমনই প্রাণের অনুকূল পরিবেশ এই পৃথিবীর সৃষ্টি হতেও লেগেছে কোটি কোটি বছর। আরও বেশী, প্রায় লক্ষ কোটি বছর লাগে, এই গ্যাসীয় পিণ্ড বা তারার জন্ম হতে। কিভাবে এই গ্যাসীয় পিণ্ড তৈরী হল, তাতে ঢোকার আগে স্মরণ করিয়ে দেই, বিজ্ঞানী নিউটন কে, এবং তার #একটি সূত্রে তিনি বলেছিলেন, যেকোন দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল কাজ করে, যা সেই বস্তু দুটির ভর এবং তাদের মধ্যেকার দূরত্বের ওপর নির্ভরশীল। যদিও পৃথিবীতে এটা প্রত্যক্ষ করা যায় না, তার কারণ পৃথিবীর ব্যাপক পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ বল। ওই যে আগেই বললাম, নিয়মের রূপগুলির ব্যত্যয় ঘটে domain পরিবর্তনের সঙ্গে।

এই সুবিশাল মহাশূন্য (উদাহরণ স্বরূপঃ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে) একেবারে ফাঁকা ও বায়ুশূন্য নয়। আসলে এই মহাশূন্য বস্তুতে পরিপূর্ণ। সেই বস্তু ভর অথবা শক্তি রূপে সেখানে হাজির, ভর মূলত যা হয়, তা হচ্ছে গ্যাস ও ধূলিকণা র। মহাশূন্যে যে মহাজাগতিক গ্যাস থাকে তাতে নিরপেক্ষ অণু পরমাণু এবং চার্জযুক্ত কণা (আয়ন, ইলেকট্রন) বিদ্যমান। এদের ঘনত্ব খুবই কম। মহাশূন্যে এই গ্যাসের ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটার এলাকায় একটি মাত্র পরমাণু! #এই ঘনত্ব কতটা কম তা বুঝতে আমরা যদি একে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের (সমুদ্রপৃষ্ঠে) তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ৩,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ (3.0 x 10^19)টি অণু পাওয়া যাবে! # মহাশূন্যে গ্যাসের ঘনত্ব এতো কম হবার কারণ এর বিশালতা। কিন্তু এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্যাস ও ধূলিকণা মিলেই কিন্তু তৈরি হয় বিশাল বিশাল গ্রহ নক্ষত্র!

কিভাবে এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্যাস ও ধূলিকণা মিলেই সৃষ্টি হয় বিশাল বিশাল গ্রহ নক্ষত্র, সেটা বোঝার আগে জানতে হবে নীহারিকাদের সম্পর্কে। ধূলিকণা, হাইড্রোজেন গ্যাস এবং প্লাজমা দ্বারা গঠিত এক ধরণের আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘ হচ্ছে নীহারিকা। সেটি তৈরীই বা হয় কিভাবে? নক্ষত্র সৃষ্টির পূর্বে গ্যাস ও ধূলিকণা মিলেই তৈরি হয় নীহারিকা, সেই নীহারিকা থেকেই নক্ষত্রের উৎপত্তি। এখন এই যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ৩,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ (3.0 x 10^19)টি# যে অণু পাওয়া যাচ্ছে, আমরা দেখতে পাই, সেই অণুগুলোর অবস্থা হচ্ছে, তারা গতিশীল। তাপমাত্রা বেশি অর্থাৎ 273 কেলভিন বা তার বেশী থাকার কারণে এবং বাস্তবে তারা ছুটে বেড়াচ্ছে, ঠিক একই সময় মহাশূন্যে প্রতি ঘন সেন্টিমিটার এলাকায় একটি মাত্র পরমাণু থাকলেও তাপমাত্রা অনেক অনেক কম অর্থাৎ 2 থেকে 3 কেলভিন থাকার কারণে তারা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে স্থিত অনু পরমাণুগুলো র মত গতিশীল নয়, ফলে পরিষ্কার যে নির্দিষ্ট কিছু ভর তাদের আছে এবং 'যেকোন দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল কাজ করে', নিউটনের সূত্র এখানে অনেকাংশে কার্যকরী#। যদিও সেই বল একটি পরমাণুর ক্ষেত্রে নগণ্য। কিন্তু যদি লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ জুড়ে এই বিস্তৃতি কল্পনা করতে পারি, তবে সেই বৃহৎ পরিসরের ভরের পরিমাপ দাড়ায় কোটি কোটি টন। একটি ভরকে সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন করে বের করে নেওয়া কার্যত অসম্ভব। কারণ সেই বৃহৎ পরিসরের আকর্ষণ বল অপরিসীম। কোন মিশ্রণের সকল অংশে যদি তার উপাদানসমুহ একই অনুপাতে বিদ্যমান এবং তাদের পৃথক অস্তিত্ব সহজে বুঝা না যায়, তাকে আমরা সমসত্ব মিশ্রণ বলে#। কিন্তু বিশাল মহাকাশে গ্যাসের অনু পরমাণু বা ধূলিকণা গুলির এই মিশ্রণ সমসত্ব মিশ্রণ নয়। ফলে ঘনত্ব কোথাও বেশী, কোথাও কম। ফলে পরিষ্কার ঘনত্ব যেখানে বেশী মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সেখানে বেশী। স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকা আকর্ষণ বলের এই তারতম্য ধীরে ধীরে ঘনিভবনের# প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হতে থাকে। কোটি কোটি বছর অতিবাহিত হয়, গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ তৈরি করতে। নীহারিকা বাস্তবে এই গ্যাস ও ধূলিকণারই মেঘ।

এই নীহারিকার আয়তনও বিশাল। আলোর গতিতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে লেগে যায় বেশ কয়েক বছর। এক্ষেত্রেও ঘনত্বের তারতম্য থাকে। বিজ্ঞানের নিয়মে আমরা অনেকেই জানি, চাপ ও ঘনত্ব, এদের একটা বাড়লে আরেকটা বাড়ে। ঘনত্ব বাড়লে চাপও বৃদ্ধি পায়। #আমরা জানি যে, উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে গ্যাসীয় পদার্থ নিম্নচাপ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘনত্ব বেশি, অর্থাৎ ভর বেশী ফলে আকর্ষণ বল বেশি। কারণ নিউটনের সূত্র অনুসারে, ভরের গুণফল এর সাথে আকর্ষণ বলও সমানভাবে বাড়ে। আকর্ষণের বলের এই বৃদ্ধির কারণে তা আশেপাশের গ্যাসকে টেনে রাখার চেষ্টা করে। ফলে নীহারিকার মধ্যে দেখা যায়, দুই পরস্পরবিরোধী প্রবণতা। সারাক্ষণই চলতে থাকা এই টানাপোড়েনের মাঝেই মাধ্যাকর্ষণ বল যখন কোন বিশেষ সময় ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে জোরদার হয়ে ওঠে, তখন স্থির অবস্থায় থাকা গ্যাসীয় পদার্থ খুব দ্রুত সেই বলের দিকে আকৃষ্ট হয়।# এখানে একটা বিষয় বলে নেয়া দরকার। কোন বস্তু যখন গতিশীল তখন তার মধ্যে গতিশক্তি থাকে, কিন্তু স্থির বস্তুর মধ্যে থাকে স্থিতিশক্তি। আবার শক্তির নিত্যতা সূত্র থেকে আমরা জানি, শক্তির ধ্বংস বা সৃষ্টি নেই, সে একরূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হয়। ফলে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকা কোন বস্তুর মধ্যেকার স্থিতিশক্তি মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে গতিশীল হয় #এবং লক্ষ আলোকবর্ষ পথ অতিক্রম জনিত কারণে, তার মধ্যেকার স্থিতিশক্তি বিপুল তাপশক্তি তে রূপান্তরিত হয়। ঘন অংশটি উতপ্ত হতে থাকে। ঘনীভবনের ফলে উদ্ভূত তাপ সৃষ্টি করে বহির্মুখী চাপের যার ফলে ঘনীভবনের প্রক্রিয়া স্তিমিত হয়ে আসে। যখন অভ্যন্তরে চাপের শক্তি এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি মোটামুটি সমান মাত্রায় আসে তখন সাম্যবস্থা সৃষ্টি হয়, জন্ম নেয় ভ্রূণতারা। আসতে আসতে ঘনীভবন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটতে থাকে, শুরু হয় বিবর্তনের প্রক্রিয়া, চলতে থাকে তারার বিবর্তন।

আগেই বলেছিলাম, তারার প্রায় ৭৫ শতাংশ হাইড্রোজেন এবং ২৫ শতাংশ হিলিয়াম এবং লক্ষ আলোকবর্ষ পথ অতিক্রম জনিত কারণে, গ্যাসীয় পদার্থ ও ধূলিকণার অনু পরমাণুর মধ্যেকার স্থিতিশক্তি বিপুল তাপশক্তি তে রূপান্তরিত হয়, ফলে তাপশক্তির কারণে একটা বিশেষ সময়ে তাপ নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়া চালু হতে শুরু করে এবং তারাটির অভ্যন্তরে তাপের স্থায়ী যোগান আসতে থাকে। বিবর্তনের এই অধ্যায়কে জানতে গেলে, জানতে হবে পরমাণুর গঠন, তার মধ্যেকার ইলেকট্রন, প্রোটন , নিউট্রনের গতি প্রকৃতি, এবং আরো বেশ কিছু বিষয়।# ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বিজ্ঞানের সহজ পাঠের পরিধিকে আরেকটু বাড়ানো দরকার। ফলে সহজ পাঠের এই অংশটা সহ তারাদের বিবর্তনের ইতিহাস তোলা থাক আরেকটা অন্য অধ্যায়ে আলোচনার জন্য। কিন্তু এই তাপ নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়া চালু হবার ফলে ওই ৭৫% হাইড্রোজেন লক্ষ কোটি বছরের জন্য তাপশক্তি যোগান দেওয়ার মত বিশাল পরিমাণ হলেও, তাতো অফুরন্ত নয়। যত দিন অতিবাহিত হতে থাকে তারাটির বয়স বাড়তে থাকে। কমতে থাকে হাইড্রোজেনের পরিমাণ। বাড়তে থাকে হিলিয়ামের পরিমাণ। ফলে দুটো পরিষ্কার ভাগ তৈরি হয়, কেন্দ্রভাগে হিলিয়ামের পরিমাণ বেশি বহির্ভাগে হাইড্রোজেনের পরিমাণ বেশি। কেন্দ্রে হাইড্রোজেনের অভাবের কারণে তাপ নিউক্লীয় বিক্রিয়া স্তিমিত হয়ে আসে। বহির্মুখী চাপের শক্তি এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি র সাম্যাবস্থা আর বজায় থাকে না। বহির্মুখী চাপ কমতে থাকে, তুলনায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তিশালী হতে শুরু করে, ফলে কেন্দ্র দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। এই সংকোচনের ফলে বিপুল পরিমাণ স্থিতিশক্তি মুক্ত হয় তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই অতিরিক্ত তাপ বাইরের হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ আস্তরণ কে ফুলিয়ে আরো বাইরের দিকে ঠেলে দেয়। যত সে প্রসারিত হয় ততো তার তাপমাত্রা কমতে থাকে। ঔজ্জ্বল্য বাড়ে লক্ষ গুণ। তারাদের মৃত্যুর আগের এই পর্যায়ে সে একটি লাল দানবে পরিণত হয়। লাল দানব দশাটি চলে অপেক্ষাকৃত কম সময় ধরে। একটা সময় এসে তারার মধ্যে আর তাপ উৎপন্ন হয় না । ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে তারাটির আয়তন বজায় রাখার মতন আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকে না। ঘনীভবন এবং প্রসারণের দ্বন্দ্বে প্রথম প্রবণতাটি চূড়ান্তভাবে জয়ী হয় এবং তারা দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। এই দ্রুত সংকোচনের খুব অল্প সময়ে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে তারাটির বাইরের অংশে হঠাৎ এক বিস্ফোরণ ঘটে যায়, যাকে আমরা বলি নোভা। নোভা পরবর্তী এই অন্তিম সময়ে সমস্ত তারার একই পরিণতি ঘটে না। তাদের ভরের উপর নির্ভর করে# তিন রকম পরিণতি হতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, যে সমস্ত তারাদের ভর সূর্যের ভরের 1.44 গুণের চেয়ে কম তারা সাদা বামনে পরিণত হয় এবং পরে সেটি ধীরে ধীরে কাল বামনে রূপান্তরিত হয়ে যায়। যদি তারাটির ভর সূর্যের ভরের 1.44 গুণ অথবা তার বেশি হয়, তখন পুরো তারাটি একটি নিউট্রনের পিন্ডে পরিণত হয়। এদের বলে নিউট্রন তারা। আর যদি তারাটির ভর সূর্যের ভরের তিন-চারগুণ হয়, তখন সেই তারাদের মৃত্যুর পর জন্ম হয় কৃষ্ণ গহবরের।